শিরোনাম
Passenger Voice | ০২:৫১ পিএম, ২০২৪-০৩-২০
আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী খেলাপি ঋণের হার যেখানে সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ সহনীয় বলে ধরা হয়, সেখানে দেশের খেলাপি ঋণ ঝুঁকি এর চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। খেলাপি ঋণ আদায়ে বাংলাদেশ ব্যাংক নানা উদ্যোগ নিলেও বস্তুত সাফল্য ধরা দিচ্ছে না। এর মধ্যে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে, ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি কারা? বাংলাদেশ ব্যাংকের সংজ্ঞা অনুযায়ী, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোয় কোনো গ্রাহক ঋণ জালিয়াতি করলেই তিনি ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি হিসাবে চিহ্নিত হবেন। একই সঙ্গে ঋণের টাকা অন্য খাতে স্থানান্তর করলে, বন্ধকি জামানত সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন ছাড়া অন্যত্র স্থানান্তর করলে বা সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও ঋণ পরিশোধ না করলেও ইচ্ছাকৃত খেলাপি হিসাবে চিহ্নিত হবেন। সংশ্লিষ্ট ব্যাংক প্রচলিত পদ্ধতি অনুসরণ করে তাদের ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি হিসাবে চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে।
সেক্ষেত্রে যারা বড় অঙ্কের ঋণ নিয়ে খেলাপি হয়েছেন, তারা কি ইচ্ছাকৃত খেলাপি হিসাবে গণ্য হবেন? বিশেষজ্ঞরা অবশ্য বলছেন, ইচ্ছাকৃত খেলাপির সংজ্ঞা অনুযায়ী, এখন ঋণ জালিয়াতি বা প্রতারণা করে যারাই ঋণ নিয়েছেন, তারাই ইচ্ছাকৃত খেলাপির তালিকায় পড়বেন। আইনটি সঠিকভাবে প্রয়োগ হলে সম্পদশালী কোনো ঋণখেলাপি থাকবে না। এখন ইচ্ছাকৃত খেলাপি শনাক্ত করার বিষয়টি ব্যাংকের ইউনিটের ওপরই নির্ভর করবে। এ ইউনিট কীভাবে ক্ষমতা প্রয়োগ করে, সেটিই এখন দেখার বিষয়। আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি, বিসমিল্লাহ গ্রুপের মতো যারা জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যাংক থেকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে, তাদের ঋণের সবই এখন খেলাপি। কিছু ঋণ সোনালী ব্যাংকসহ কয়েকটি ব্যাংক অবলোপন করলেও ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা মেরে তারা দিব্যি বিমানে চড়ছেন, বাড়ি-গাড়ি কিনে তা নিবন্ধও করছেন। এদের বিরুদ্ধে নতুন নীতিমালার আলোকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না তা পরিষ্কার নয়।
আমরা মনে করি, বড় অঙ্কের ঋণখেলাপি হিসাবে যাদের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে, তাদের প্রত্যেকেরই সম্পদ, বাড়ি, গাড়ি ও ব্যবসা রয়েছে। অন্য সবার মতো এদেরও প্রচলিত আইন অনুযায়ী ইচ্ছাকৃত খেলাপি হিসাবে চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। শুধু তাই নয়, তাদের ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপির শর্তানুযায়ী বিমানে চড়া বন্ধ, ট্রেড লাইসেন্স, কোনো কোম্পানির নিবন্ধন, শেয়ার ছাড়ার অনুমোদন না নেওয়া এবং বাড়ি, গাড়ি, জমি, ফ্ল্যাট কিনে নিবন্ধন করা আটকে দিতে হবে। ঋণ পরিশোধ ছাড়া কোনো সম্পদ বা কোম্পানি গড়ে যাতে নতুন ব্যবসা করতে না পারে, ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হতে না পারে, সে পদক্ষেপও নেওয়া দরকার। একই সঙ্গে বিধান অনুযায়ী কোনো ব্যাংক বিধি ভঙ্গ করে ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের ছাড় দিলে তাদের বিরুদ্ধেও মোটা অঙ্কের জরিমানাসহ কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এজন্য অর্পিত দায়িত্ব যথাযথ পালন হচ্ছে কি না, তা নিশ্চিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচিত হবে ওই ইউনিট ও ব্যাংকের ওপর নজর রাখা। যাতে তারা কোনো পক্ষপাতিত্ব করতে না পারে। সঠিকভাবে তারা দায়িত্ব পালন করলে যাদের একেবারেই কিছুই নেই, তারাই কেবল খেলাপির তালিকায় থাকবেন। মোট কথা, ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপির সংজ্ঞা সুস্পষ্ট করা জরুরি, যাতে সুযোগসন্ধানী রাঘববোয়ালরা পার পেয়ে যেতে না পারে।
প্যা/ভ/ম
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত 2019 - 2024 PassengerVoice | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ
Developed By Muktodhara Technology Limited.